কুরআনের উদ্দেশ্য (সূরা আল-কাহফ আয়াত ১-৬ থেকে)

quranguide

(অনন্ত করুনাময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে)

১- প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর দাসের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এই গ্রন্থ, আর রাখেননি এতে কোন ঘুরপ্যাঁচ (যাতে এ গ্রন্থ মানুষকে সরলপথে চালিত করতে পারে)।

২- (তিনি একে করেছেন) ঋজু  (যে নিজে ন্যায়নিষ্ঠ ও এর অনুসারীকে ন্যায়নিষ্ঠতার দিকে চালিত করে)– তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য; আর বিশ্বাসীরা, যারা ভাল কাজ করে, তাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য – যে তাদের জন্য রয়েছে অপরূপ পুরষ্কার!     

৩ – যেখানে তারা থাকবে চিরকাল।

৪ – আর সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে – আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন।  

৫ – এ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই তাদের, না ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের। তাদের মুখ থেকে বেরোয় কি ভয়ংকর কথা! মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না।

৬ – অথচ হয়ত তুমি (হে রাসূল(সা)) ওদের পিছনে ঘুরে মেরেই ফেলবে নিজেকে, বিষাদে – যদি তারা এই বাণীতে বিশ্বাস না করে। 

 

আয়াতের শিক্ষা:

১) কুরআনে আল্লাহ “ঘুরপ্যাঁচ” রাখেননি। এই  সরলতা মানুষকে এটাও মনে করিয়ে দেয় যে কুরআন আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরল পথে চালিত করে।

২-৩) কায়্যিম এর অনুবাদ করা হয়েছে ঋজু (upright)। অন্যকে গাইড করতে হলে নিজেকে আগে গাইডেড হতে হয়। কুরআন হলো কাইয়িম বা ঋজু/ন্যায়নিষ্ঠ, আর তাই এটা অন্যকেও ন্যায়নিষ্ঠতার দিকে চালিত করতে পারে। আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ হতে হবে স্রষ্টার প্রতি (তার সাথে শিরক না করে) ও সৃষ্টির প্রতি। ন্যায়নিষ্ঠতার এই পথই সরল পথ।

মহান আল্লাহ কুরআন নাজিল করেছেন যাতে আমরা এর অনুসরণ করে জীবনে ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। কুরআন আরবীতে পড়া জরুরি কারণ তা আল্লাহ্‌র শব্দ, কিন্তু এর অর্থ ও ব্যাখাও বুঝতে হবে এবং জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। হুজুর ভাড়া করে খতম করানোর জন্য কুরআন নাজিল করা হয়নি।

“তাঁর কঠিন শাস্তি” বলতে এখানে দুইটা বিষয় বোঝানো হতে পারে। এক – হতে পারে এটা পরকালের শাস্তি। অথবা দুই – এটা হতে পারে এই দুনিয়ার ফিতনা (পরীক্ষা)। সকল ফিতনার চেয়ে বড় ফিতনা হলো দাজ্জালের ফিতনা। হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানি এই সূরা পড়লে ও এর শিক্ষা মেনে চললে মানুষ দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে পারবে। আর সেই ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য শুধু বিশ্বাসী হলেই চলবে না, ভালো কাজও করতে হবে। 

৪) “আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন” – এ কথা খ্রিষ্টানরা বলে। মূর্তিপূজারীরাও বলতো ফেরেশতারা আল্লাহ্‌র কন্যা। তবে, আরো ব্যাপক অর্থে – আল্লাহ সম্পর্কে যারা না জেনে কথা বলা তাদের সবার সম্পর্কেই এখানে বলা হয়েছে। বর্তমান যুগের নাস্তিকেরাও আল্লাহ্‌ সম্পর্কে অনুমানের উপর কথা বলে।  

এই সূরায় আল্লাহ্‌র সন্তান না গ্রহণ করার বিষয়টা শুরুতেই উল্লেখ করার আরেকটা কারণ হলো – এই সূরা মানুষকে রক্ষা করবে দাজ্জালের ফিতনা থেকে। আর দাজ্জালকে হত্যা করতে আল্লাহ পাঠাবেন ঈসা (সা) কে। ঈসা (আ) যখন ফিরে আসবেন, তিনি আসবেন নবী মুহাম্মাদ(সা) এর উম্মত হিসেবে। ঈসা(সা) ফিরে এসে খ্রিষ্টানদের ভুল ভাঙাবেন। তারা জানতে পারবে – তিনি আল্লাহ্‌র সন্তান নন, আর তিনি তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মারাও যাননি।

৫) জ্ঞান ছাড়া কথা বললে ভুল হবে। তাই জানার চেষ্টা করতে হবে। বাপ-দাদারা কিছু বলে গেছে বা করে গেছে বলেই, বা আমার হুজুর এটা বলেছে – তাই এটা সঠিক হবে এমন কোন কথা নেই। বরং – কুরআনে কি বলা আছে তার দিকে দেখতে হবে। নিজের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করে চিন্তা করতে হবে। নিজের চিন্তাশীলতা ব্যবহার না করে তোতাপাখির মত বুলি আউড়ে ভুল কথা বলে থাকলেও সেটা মিথ্যা কথা বলে গণ্য হবে। 

৬) মানুষকে ইসলামের পথে ডাকতে কতটা আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন তা বুঝা যায় এই আয়াত থেকে। দাওয়াহ শব্দের ইংরেজী হলো Invitation, বাংলায় আমন্ত্রণ। অথচ, আজ যখন আমরা আমাদের বিরোধী মতের কারো সাথে ইসলামের কথা বলি, হোক সে অমুসলিম, শিয়া বা অন্য মাজহাবের বা দলের মুসলিম – আমাদের উদ্দেশ্য থাকে আক্রমণ করা, হেয় করা, তুচ্ছ্যতাচ্ছিল্য করা বা বুঝিয়ে দেয়া আমি বেহেস্তে যাচ্ছি আর তুমি নিশ্চিত দোজখে যাচ্ছ! কবে শেষবার ভিন্নমতের কাউকে ইসলামের কথা বলতে যেয়ে আপনি রাগ না করে, অহংবোধ না করে বরং বিষাদ গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন?

আমাদের লক্ষ্য হবে প্রথমে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা, রাসূল(সা) সম্পর্কে জানা, তাঁর (সা) দাওয়াতের সুন্নাহগুলো জানা, তারপর মানুষের সাথে আন্তরিকতার সাথে ইসলামের কথা বলা। কাউকে হেয় না করা, অপদস্থ না করা, “এক্সপোজ” করার চেষ্টা না করা। আমি তোমার চেয়ে বেটার – এই ধরনের শয়তানী গর্ববোধ না করা।

#কাহফ_বিটস  

( লেখাটি লিখতে বিভিন্ন ক্লাসিকাল ও আধুনিক তাফসীর এবং উস্তাদ নুমান আলি খান ও শেইখ ইয়াসির কাদি এর লেকচার এর সহায়তা নেয়া হয়েছে। )

1 thoughts on “কুরআনের উদ্দেশ্য (সূরা আল-কাহফ আয়াত ১-৬ থেকে)

  1. পিংব্যাকঃ কুরআনের উদ্দেশ্য (সূরা আল-কাহফ আয়াত ১-৬ থেকে) – Honesty

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান